বাংলাদেশে সফল ভাবে রাস পদ্ধতিতে লাভজনক মাছ চাষ।
ক্যাডসন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রথম বাংলাদেশে রাস ইকু্পমেন্ট তৈরীর উদ্দ্যোগ গহন করে ২০১৭ সনে। তিন বছর গবেষনা, ডিজাইন ও ম্যানুফেকচারিং করতে চলে যায়। ২০২০ সনের জানুয়ারী মাসে ফিস ল্যাব লিঃ এর রাস প্রজেক্ট এর কাজ সম্পন্ন হয়। মার্চ মাসে পোনা ছাড়া হয়।প্রতিমাসের রেকর্ড অনুযায়ী প্রতি মাসে মাছ তিগুন বড় হচ্ছে। কিন্তু তেলাপিয়ার ক্ষেত্রে একমাসে ৮ গুন বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রজেক্ট এর পানির কোয়ালিটি সবসময় সচ্ছ ও এমোনিয়া মুক্ত। প্রজেক্ট এর সবচাইতে বড় সুবিধা হল এর বিদ্যুত ব্যায় বিদেশী প্রজেক্ট এর তুলনায় প্রায় অর্ধেক।প্রজেক্ট ভিজিট করে অনেকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না যে এই সব যন্ত্রপাতি এই দেশে তৈরী করা হয়েছে।
বিদেশিদের আমরা প্রজেক্ট এর ডিজাইনের কাজ করে দিচ্ছি, তাই তাদের সাথে টেকনোলজি আদান প্রদান হচ্ছে।বিদেশ থেকে যেমন আমেরিকা, কুয়েত, ভারত থেকে অনেক সারা পাওয়া যাচ্ছে। খুব শিঘ্র ক্যাডসন দেশে আরো দুইটি প্রজেক্ট এর কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। এবং আমেরিকার প্রজেক্ট আমরা কিভাবে করবো সেটা নিয়ে আলোচনা চলছে।
এই পোষ্টের মূল উদ্দেশ্য হল। আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করা। কেন এতদিন বিদেশ থেকে মেশিন এনে দেশে সফল ভাবে মাছ চাষ করা যায়নি। কি কি সমস্যা আছে আমাদের এই প্রযুক্তিতে মাছ চাষ করায়।সেটাই এখানে আমি বলতে চাই।
অনেকের ধারনা ট্যাংক এ মাছ চাষ এ আর এমন কি? তাই যখন টাকার অংক বড় দেখে সবাই তখন নিজে নিজে ট্যাংক তৈরীর চেষ্টা করে। চায়নাতে অনলাইনে কোটেশন চাইলে তারা শুধু মেশিনের দাম দিয়ে দেয়। অথচ পুরো প্রজেক্ট সেটআপ করতে প্রজেক্ট এর ডিজাইন সহ আরো অন্যান্য খরচ প্রায় সকল মেশিনের দামের সমান। অর্থাত সকল মেশিনের মোট মূল্যের দিগুন ধরতে হবে।
প্রজেক্ট এর ফ্লো-রেট একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়। চায়নারা অর্ধেক ফ্লো-রেটের মেশিন দেয় যাতে খরচ তিন ভাগের একভাগ হয় এবং কাষ্টমার তা কিনতে দ্বিধা বোধ না করে। প্রজেক্ট এর ডিজাইন ছাড়া একটি প্রজেক্ট কখনো সেটআপ করা সম্ভব না। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ন যে কোথায় পানি গ্রাভিটি ফোর্সে মুভ করবে আর কোথায় পাম্পের সাহায্যে? প্রতিটি জায়গার আলাদা আলাদা ফ্লো অনুযায়ী আলাদা আলাদা পাইপ সাইজ দরকার।আমাদের দেশে যেহেতু প্রজেক্ট ডিজাইন নিয়ে কাজ হয় না, তাই এখানে কেউ এই কাজ করে দিতে পারবে না।
বিদেশী প্রজেক্ট এ বিদ্যুত ব্যায় বেশী। তাদের দেশে তেলাপিয়া মাছের দাম আমাদের দেশের তুলনায় প্রায় ৫/৬ গুন।সরকার তাদের অর্ধেক বিদ্যুত বিল বহন করে।তাই তাদের অসুবিধা না হলেও আমাদের অসুবিধা হবে।
আমাদের দেশে পুকুরের সময় অনুযায়ী পোনা উৎপাদন হয়। কিন্তু রাস প্রজেক্ট এ চার মাস অন্তর অন্তর পোনা দরকার। ৪৫% – ৫০% প্রটিন সমৃদ্ধ ফিড দরকার এই চাষে। কারন এখানে খাবারের অপচয় হয় না তাই দামী উন্নতমানের খাবার ব্যাবহার করলে দ্রুত বৃদ্ধি হয়।
এই সকল সমস্যা সমাধানের জন্য প্রজেক্ট এর ডিজাইন ও অতিরিক্ত কি কি সুবিধা প্রজেক্টে থাকতে হবে তা খুবই গুরুত্বপূর্ন। তাহলেই কাঙ্খিত ফল পাওয়া যাবে।
একটি গ্রো-আউট ট্যাংকে কখনো পোনা ছাড়া যায় না। সেখানে আমাদের হ্যাচারি গুলো রেনু পোনা, ধানি পোনা বিক্রি করে থাকে।আর আমাদের যত রাস প্রজেক্ট বিদেশ থেকে আনা হয়েছে, তারা সব বড় ট্যাংক দিয়ে তাদের প্রজেক্ট করেছে। তাই তাদের ট্যাংকের উপযোগী বড় পোনা পেতে সমস্যা। পুকুরে হাপার ভেতরে স্থির পানিতে অভস্থ্য পোনা ট্যাংকে এসে ৫০-১০০ টন পানির ফ্লো ট্রেপ দিয়ে বেড় হতে থাকলে ঐ দূর্বল পোনা তা সহ্য করতে পারে না।আবার পানির ফ্লো কমিয়ে দিলে এমোনিয়া বেড়ে যাবে অক্সিজেন কমে যাবে।নির্দিষ্ট পরিমান অক্সিজেন ঠিক রাখতে হলে নির্দিষ্ট পরিমান পানির ফ্লো ঠিক রাখেতে হবে।তাই প্রজেক্টে তিন ধরনের ট্যাংকের ব্যাবস্থা থাকা দরকার।নার্সারি, ষ্টারটার ও গ্রো-আউট। তিন ধরনের ট্যাংকের ঘনত্ব তিন রকম হবে। সেই হিসাবে পুরো প্রজেক্ট এর ডিজাইন নিশ্চিত করতে হবে। একটি ব্যাচ ষ্টারটার এর মাঝামাঝি পর্যায় গেলে আবার নার্সারির পোনা ছেড়ে দিতে হবে। তবেই বছরে চার থেকে পাঁচটি ব্যাচ বের করা যাবে।এবং অল্প খরচে বেশী মাছ উৎপাদন হবে আর প্রজেক্ট বেশী লাভজনক হবে।
এই সকল কারনে কোন প্রজেক্ট সস্তায় কোনরকমে করা উচিত না। তাহলে মাছ বেচেঁ থাকলেও প্রজেক্ট লাভজনক হবে না।
এরপর আছে প্রজেক্ট এর অটোমেশন। কখন কোন পাম্প, ব্লোয়ার ইত্যাদি চলবে সেটা পানির প্রারামিটারের উপর ভিত্তি করে হতে হবে নতুবা অযথা বিদ্যুত ব্যায় হতে থাকবে।
আমাদের ট্যাংক এর সারফেস ৩০% নাইট্রিফিকেসনের কাজ করে যা কিনা বায়োফিল্টারের কাজ। ট্যাংক থেকে সলিড আলাদা ভাবে ওয়েষ্ট কালেকটরে জমা হয়। তাই অটোমেটিক ট্যাংক পরিষ্কার থাকে।এই কারনে ড্রাম ফিল্টার কম চলে তাই বিদ্যুত কম খরচ হয়।অন্যান্য সকল ফিল্টার ও অটো ক্লিনিং সিসটেম হওয়ায় ফিল্টারের কার্যকারিতা বেশী ও পানি স্বচ্ছ ও এমোনিয়া মুক্ত থাকে । এই কারনে মাছের গ্রোথ খুব ভাল।
অতএব বাংলাদেশের জন্য একটি প্রজেক্ট ডিজাইন করতে হলে ট্যাংক থেকে শুরু করে প্রতিটি ইকুইপমেন্টের ম্যাটেরিয়াল সিলেকশন ডিজাইন প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টের খুটি নাটি মাথায় রেখে ডিজাইন করতে হবে যাতে চোখ বন্ধ করে নিশ্চিন্তে মাছ চাষ করা যায়।
ধন্যবাদ
জেমস্ মার্টিন অুধকারী
(ফাউন্ডার ও সিস্টেম ডিজাইনার)
ক্যাডসন ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড সার্ভিসেস