আকুয়াকালচার ইঞ্জিনিয়ারিং
আকুয়াকালচার ইঞ্জিনিয়ারিং
পৃথিবীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে খাবারের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সমতল চাষাবাদের জায়গাও কমে আসছে। তাই এই চাহিদা পূরণের জন্য আমাদের কম জায়গায় বেশী খাদ্য উৎপাদন এর জন্যে আমাদের উদ্দ্যোগ গ্রহন করতে হবে। এই সকল খাদ্য উৎপাদনের মধ্যে মৎস উৎপাদন একটি অন্যতম আবাদ এর ক্ষেত্র। আমাদের খাদ্যে আমিষের চাহিদা পূরণে মৎস্যসম্পদ উন্নয়ন, মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি খুবই গুরুত্বপূর্ন। এছাড়া সাস্থ্য সম্মত মাছ উৎপাদন করতে পারলে আমরা অনেক বৈদেশিক অর্থ দেশে আনতে পারি। পকুরে মাছের পরিবেশ ঠিক রাখতে চুন, সার, ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়, যা মাছের জন্য ভাল নয় এবং সেই মাছ আমাদের জন্যও ভাল নয়। মাছ অক্সিজেন না পেলে খাবার খেতে পারে না। তাই তারাতাড়ি বড় হয় না। তাছাড়া এমোনিয়া ও টক্সিক উপাদানের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই পুকুরে মাছ বড় হতে অনেক সময় লাগে।মৎস চাষের অনেক উপায়ের মধ্যে RAS (রাস ) একটি আধুনিক মৎস্য চাষ পদ্ধতি। এই পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য হল অল্প জায়গায় অধিক মান সম্মত মাছ উৎপাদন। এই পদ্ধতিতে পুকুরের পরিবর্তে একাধিক বিভিন্ন আকৃতির ট্যাংক ব্যাবহার করে মাছ চাষ করা হয়। এই পদ্ধতিতে একই পানি পুনরায় ব্যাবহারের জন্য বিভিন্ন রকম ফিল্টার ও যন্ত্রপাতি ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। এই জলজ উৎপাদন প্রক্রিয়াকে একটি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে মাছ উৎপাদন বলা যায়। এই আধুনিক উৎপাদন প্রক্রিয়া বর্তমান সময়ের এই বিপুল আমিষের চাহিদা মেটাতে বিরাট ভুমিকা রাখতে পারে। বর্তমান সময়ের সকল মাছ চাষ পদ্ধিতির মধ্যে RAS (রাস) সবচাইতে দ্রুত বৃদ্ধি লাভের একটি পরিক্ষিত পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে দেশী শিং, দেশী-বিদেশী মাগুর, পাবদা, টেংরা বা গুলশা, টেলাপিয়া, পাংগাস, চিংড়ি, ভেটকি ইত্যাদি নানা প্রজাতির মাছ চাষ করা যায়। এই পদ্ধতিতে বিশুদ্ধ পানিতে সাস্থ সম্মত মাছ চাষ করা হয়। RAS (রাস) মূলত ঘরের ভিতরে ট্যাংকের মধ্যে অধিক ঘনত্বে এবং একটি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে মাছ উৎপাদন প্রক্রিয়া। যেখানে মাছ চাষের জন্য উপযুক্ত জলাশয় বা পানি নেই, সেখানেও এই পদ্ধতি ব্যাবহার করা যায়। এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ খুবই লভজনক কিন্তু এর প্রধান সমস্যা হল অধিক বিনিয়োগ । কিন্তু অধিক বিনিয়োগ হলেও অধিক মুনাফার জন্য ২ বছরেই এই বিনিয়োগ উঠে আসে। পুকুরের তুলনায় তিন ভাগের এক ভাগ জায়গা ব্যাবহার হয়। ১০ জনের পরিবর্তে মাত্র ২/৩ জন লোক দিয়ে কাজ করা যায়। মাছের খাবারও তিন ভাগের এক ভাগ লাগে। পুকুরে ১০-১২ মাস লাগে মাছ বড় হতে। এই প্রযুক্তিতে ৩-৪ মাস সময়ে মাছ বড় হয়। পুকুরের চাইতে এই মাছের মূল্য বেশী।এই পদ্ধতিতে সাধারণত নিম্নলিখিত মেশিনারী ব্যাবহার হয়ে থাকে। যেমন. ১) কালচার ট্যাংক, ২) ম্যাকনিক্যাল ফিল্টার, ৩) বায়োলজিক্যাল ফিল্টার, ৪) প্রটিন স্কিমার, ৫) ইউভি স্টেরিলাইজার, ৬) পানির পাম্প, ৭) অক্সিজেন জেনারেটর ইত্যাদি । এই সকল মেশীন শুধুমাত্র পানির পরিশোধন এর কাজ করে এবং পানিতে ডিজল্ভ অক্সিজেন বাড়ায়। এই পরিশোধন এর পুরো প্রক্রিয়া হয় বায়োলজিক্যাল পদ্ধতিতে। মাছের বর্জ থেকে যে এমোনিয়া ও কার্বোনডাই অক্সাইড তৈরী হয় তা বায়োলজিক্যাল ফিল্টারে দুই প্রকার বেনিফিসিয়াল ব্যাকটেরিয়া তৈরী করে এবং এর একটি ব্যাক্টেরিয়া এমোনিয়াকে নাইট্রাইট এ রুপান্তর করে আবার আর একটি ব্যাকটেরিয়া নাইট্রাইটকে নাইট্রেটে রুপান্তর করে। একটি প্রজেক্ট ডিজাইন করতে কি কি মেশিন দরকার এবং কোন মেশিনের কি ধরণের ক্যাপাসিটি লাগবে তা নির্নয় করার জন্য অনেকগুলো ক্যালকুলেশনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। সঠিক ক্যাকুলেশন ও ডিজাইনের উপর নির্ভর করে প্রজেক্টের সাফল্য এবং ব্যায়। 2017 সনের শুরুর দিকে জেমস্ মার্টিন অধিকারী বাংলাদেশে RAS এর মেশিনারী তৈরীর জন্য গবেষনা ও মেশিন ডিজাইন এর কাজ শুরু করেন। তিনি বছরের শুরুর দিকে SRAC (Southern Regional Aquaculture Center) এর RAS গবেষনার উপর ভিত্তি করে আধুনিক RAS মেশিনারী ডিজাইন শুরু করেন। আমেরিকা সহ পৃথিবীর অনেক দেশেই SRAC এর RAS গবেষনার উপর ভিত্তি করে তাদের মেশিন ও প্রজেক্ট ডিজাইন করে থাকে। এছাড়া বিগত দিনে জেমস্ মার্টিন অধিকারীর বায়োলজিক্যাল ETP প্ল্যান্ট ও WTP প্ল্যান্ট এ হাতে কলমে কাজ করার অভিজ্ঞতা ও মেশিন ডিজাইন ও মেনুফেকচারিং এর অভিজ্ঞতা আছে যা এই কাজে তাকে শতভাগ সাফল্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়াও তিনি ইন্ডষ্ট্রিয়াল ইলেক্ট্রিক সার্কিট ডিজাইন ও পি এল সি অটোমেশনে সমান ভাবে দক্ষ। তাই তিনি একটি অত্যাধুনিক সম্পূর্ন সয়ংক্রিয় RAS Plant এর স্বপ্ন দেখেন। তার অক্লান্ত প্ররিশ্রম, কারিগরি দক্ষতা ও সুদূরপ্রসারী চিন্তা ভাবনা থেকে এই সকল মেশিনারী ডিজাইন সম্পন্ন হয়। তার প্রতিষ্ঠান ” ক্যাডসন ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড সার্ভিসেস ” এই সকল মেশিন প্রস্তুত, স্থাপনা ও কারিগরি সহায়তা কয়েকটি ধাপে দিয়ে থাকে। বর্তমানে ঢাকার নিকটে একটি ১২০ কিউবিক মিটার এর একটি মিনি আর এ এস সেট আপ এর কাজ শেষ পর্যায়। আমেরিকার ওয়াশিনটন ডিসিতে আর এ এস এর ইঞ্জিনিয়ারিং এক্সপার্ট হিসাবে একটি পার্টনাশিপ প্রজেক্ট সেটআপের জন্য প্রক্রীয়াধীন। টার্কির একটি কোম্পানী ষ্টেভরাস এর সাথে ক্যাডসন এর একটি চুক্তি সম্পাদন হতে যাচ্ছে, তাদের আর এ এস এর সকল প্রজেক্ট ও মেশিন ডিজাইনের কাজ বাংলাদেশ থেকে করে দেয়া হবে। বর্তমানে ক্যাডসন এগ্রো-পার্ক ডিজাইন করে দেশে ও বিদেশে ব্যাবসায়িদের দৃষ্টি কেড়েছে।বর্তমানে ক্যাডসন সাইপ্রাসের ষ্টেভরাস কোম্পানীর ক্লায়েন্টদের আর এ এস প্রজেক্ট থ্রিডি ডিজাইনএর কাজ নিয়মিত ভাবে করছে।